নারীর স্বাস্থ্য

প্রসব পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য: মা-শিশুর যত্ন যেমন হওয়া দরকার

নতুন মায়ের জন্য নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আছে। কিছু কিছু ব্যাপার হযতো গোড়ামি বা কুসংস্কারের পর্যায়ে চলে যায়, মায়েদের মনের আর শরীরের জন্য এসব বিষয় তখন বোঝা হয়ে দাঁড়ায়

পুরো ৯ মাসব্যাপী গর্ভকালীন প্রসেস ও সন্তান জন্মদানের পর যে হ্যাসেল, পেইন, কম্প্রোমাইজ আর তার পাশাপাশি ভয়ঙ্কর রকমের হরমোনাল এডজাস্টমেন্ট তৈরি হয় সেসব বিষয়ে বোঝা দরকার আমাদের। পোস্টপারটাম সময়টার কথা যদি বলি সেটা সাধারণত সন্তান জন্মদানের ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে। এরপর অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করে। আবার অনেকের বিভিন্ন জটিলতাও তৈরি হয়।

নতুন মায়ের খাওয়া দাওয়া, ওঠা বসা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, বিশ্রাম করা, হাঁটা চলা করা, এই সব নিয়ে একেক এলাকায় একেক রকম নিষেধাজ্ঞা আছে। সব নিয়মরীতি অথবা ঘরোয়া সেবা ও পরিচর্যা খারাপ বা ক্ষতিকর হয় না, বরং নতুন মায়েদের আরাম দেয়, শান্তি দেয়। কিছু কিছু ব্যাপার হযতো গোড়ামি বা কুসংস্কারের পর্যায়ে চলে যায়, মায়েদের মনের আর শরীরের জন্য এসব বিষয় তখন বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

এশিয়ান দেশগুলোতে পজিটিভ রিচুয়্যালগুলোর মধ্যে আছে, হাসপাতাল থেকে আসার পরপরই, ৫ থেকে ৬ দিন উষ্ণ গরম পানিতে মায়ের পা ভিজিয়ে রাখা; কুসুম গরম তেল মাথায় চুলে ম্যাসাজ করে দেওয়া। অনেক জায়গায় প্রসূতি মায়ের স্টিম বাথ করিয়ে দেওয়া হয়।  প্রথম ১ মাস একদম তিন বেলা বিভিন্ন রকম সুপ, ফ্রেশ সবজি মাছ, ইত্যাদি রান্না করে খাওয়ানো। আমাদের দেশে সবাই মিলে নতুন মাকে লাউ, কালিজিরা, শিং মাছের ঝোল ইত্যাদি খাওয়ায় বাচ্চার জন্য দুধ সাপ্লাই ঠিক রাখার জন্য। এশিয়ান পটচিত্রে বাচ্চা হওয়ার পর ৪০ দিন বা ২ মাস বের হতে পারে না। এই সময়টাতে আসলে একটু আরাম করলে, নিজের মত টাইম কাটালে, বাসার অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে মজা করতে পারলে, মা আর বাচ্চার সুসাস্থ্য নিশ্চিত থাকবে। তবে কোনো একটা নিয়ম এমনভাবে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, যেখানে মায়ের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে এবং মা সেটা চিহ্নিত করতে পারছে।

প্রসব পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য মা-শিশুর যত্ন যেমন হওয়া দরকার
প্রসব পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য মা-শিশুর যত্ন যেমন হওয়া দরকার

ঢাকার শেষ প্রান্তে দিকে দাইমা বা বাচ্চা রাখার লোক পাওয়া যায়। যারা সদ্য বাচ্চা হয়েছে এমন বাসায় কাজ নেয়, এটা তাদের পেশা। এই দাইমায়েরা মধ্য বয়স্ক হয়, বিশেষ করে ৫০ এর ওপরে। তারা মোট ৪০ দিনের চুক্তি করে আর তারপর পাওনা নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যায়।

মায়ের প্রতি বেলার খাবার ফ্রেশ রান্না করা থেকে শুরু করে, মায়ের পছন্দের সব আইটেম করে দেওয়া, সদ্য প্রসূতি মায়েদের গোসলে সহায়তা করা, মায়ের মাথার চুলে জট খুলে দেওয়া, তলপেটে তেল মালিশ ও বাচ্চার সঙ্গে রাত জাগা সব করে থাকে এই ৪০ দিন। কিছু কিছু বাচ্চা আছে যারা কলিক বেবি আর সারা রাত কান্না করে, তাতে মায়েদের প্রেসার বেড়ে যায়, প্যানিক করে অথবা মায়েদের একটা অসহায়ত্ব ভর করে। এই দাইমা বা পেশাদার মিড ওয়াইফরা মায়েদের উদ্ধার করে এই বিভিষীকা থেকে।

নবজাতকের গোসল দেওয়া থেকে শুরু করে, হাত পায়ের হাড় শক্ত হবার জন্য সুন্দর করে তেল মালিশ করে থাকেন, বাচ্চার টামি টাইমের বেশ খেয়াল রাখেন মানে বাচ্চাকে উল্টা করে রাখা খাওয়ার পর যাতে বমি না আসে। নাভী শুকানো পর্যন্ত খেয়াল রাখা, রোদ পোহানো বাচ্চার গায়ে ইত্যাদি বেশ আগ্রহ নিয়ে আর দক্ষতা নিয়ে করতে হয়। বাচ্চা জন্মদানের পর বিশেষ করে সিজারিয়ান অপারেশানের পর সব নারীদের পেটের নিচের অংশে ব্যথা থাকে, অথবা বিকৃত দাগ হয়ে যায়। সেখানে খাটি অলিভ ওয়েল, কালিজিরার তেল ইত্যাদি মালিশ করে থাকেন তারা। আলতোভাবে যাতে চামড়ার কুচকানো ভাব কমে যায়। গ্রিক ভাষায় এই ধরণের সাহায্যকারী দাইমাদের বলা যেতে পারে পোস্ট পারটাম ডোওলা।

আমাদের দেশে বাচ্চা হওয়ার পর হয়তো ওইভাবে অনুষ্ঠান করা হয় না কিন্তু “বাচ্চার মুখে ভাত”র আয়োজন করে। তবে পোস্ট পারটাম সময়ে আমাদের মফস্বলেও কিছু নিয়মরীতি আছে। ৪০ দিন মায়েদের ঘরে থাকতে বলা হয়। এগুলো কিন্তু কিছু অদ্ভুত রিচুয়্যাল আছে যেমন বাচ্চাদের ডায়পার দেওয়া যাবে না, তাহলে বাচ্চারা কষ্ট পাবে আর মায়েরা আরাম করবে। হাঁটাচলাও পুরোপুরি নিষেধ করে দেওয়া হয়, ফলে মায়েরা নিজেদের রিল্যাক্স করার সময় পায় না। এতে করে মায়েদের স্ট্রেস লেভেল আরো বেড়ে যায়। কোনো সাজসজ্জা করতে দেওয়া যাবে না এই সময় মায়েদের, এই ধারণাটাও খুব গোড়া। মায়েদের রিলাক্স রাখতে বরং তাকে স্টিম বাথ দিয়ে, চুলে সুন্দর করে শ্যাম্পু করানোর পর চুলে ফুল গুজে দিলে মায়ের মন উৎফুল্ল থাকবে।

Back to top button