প্রসব পূর্ববর্তী যত্ন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

প্রচুর জল পান করে ডিহাইড্রেশন এড়িয়ে চলুন

অভিনন্দন, আপনি গর্ভবতী! এই খবরটি পেয়ে আপনি উত্তেজিত, সাথে সাথে আপনার মনে অনেক চিন্তাভাবনাও চলছে! গর্ভাবস্থা সম্পর্কে সবকিছু জানতে আপনি হঠাত করে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মনে রাখবেন, আপনি এই অবিশ্বাস্য যাত্রায় পা রাখলে, প্রতি দিন নতুন কিছু জানতে পারবেন।

এখানে কিছু প্রশ্ন, তাদের উত্তর এবং গর্ভাবস্থার যত্নের কৌশল দেওয়া রয়েছে যা আপনার শিশুর জন্মের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় দরকারে আসতে পারে।

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা কি?

আজ সকলেই একটি সুষম ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার দিকে লক্ষ্য রাখে। ভাল স্বাস্থ্যের উপর এই মনোযোগটি আপনার বাচ্চার এবং আপনার লাইফস্টাইল পছন্দগুলির ক্ষেত্রে আরও বেশি জোরদার হয়। একজন সুস্থ হবু মা এবং স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা হাতে হাত ধরে চলে। ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধির এবং বিকাশের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর ওজন, সুষম খাদ্য, পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানসিক সুস্থতার মতো বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। এতে স্বাভাবিক রক্তচাপ, স্বাভাবিক রক্ত শর্করার মাত্রা বজায় রাখা এবং মাদকদ্রব্য, অ্যালকোহল এবং ধূমপানকে না বলাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গর্ভাবস্থায় আপনি কীভাবে আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নেবেন?

আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে আপনি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারেন। একটি সুস্থ জীবনধারা শুধুমাত্র একটি মসৃণ গর্ভাবস্থাই নিশ্চিত করে না, এটি আপনার সামগ্রিক কল্যাণও করে। প্রথম ত্রৈমাসিক আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনি গর্ভাবস্থার যাত্রায় সবে ছোট পা ফেলেছেন।

1. প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থার যত্ন

স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার সঠিক যত্ন আপনি যে গর্ভবতী তা বুঝতে পারা মাত্রই শুরু করা উচিত। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে আপনাকে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে:

  • আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন এবং প্রারম্ভিক প্রসবকালীন যত্ন নিন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রসূতি পরীক্ষাগুলি।
  • আপনার খাদ্যের যত্ন নিন, এবং ভালোভাবে রান্না না করা খাবার, ঠান্ডা মাংস এবং অনির্বীজিত দুগ্ধজাত দ্রব্যগুলি এড়িয়ে যান, যাতে শিশুর ক্ষতি হতে পারে এমন ব্যাকটেরিয়া এড়ানো যায়। স্বাস্থ্যকর এবং তাজা খাবার খান।
  • প্রসব পূর্ববর্তী ভিটামিন এবং লোহা এবং ফোলিক এসিডের মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিপূরক নিন। শিশুদের টিউব বার্থের ত্রুটির ঝুঁকি কমাতে ফোলিক এসিড প্রয়োজন।
  • আপনার ডাক্তারের পরামর্শের পরে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং প্রয়োজনীয় ব্যায়াম করুন
  • আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দিন, আপনি চাপ মুক্ত তা নিশ্চিত করুন এবং নিজেকে ইতিবাচক ও সুখী রাখুন, কারণ আপনাকে গর্ভাবস্থায় অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হবে।

2. গর্ভাবস্থায় যত্ন নেওয়ার মতো বিষয়গুলি

গর্ভাবস্থা এগোতে থাকলে, আপনার প্রয়োজনীয়তারও পরিবর্তন হয়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যেগুলি সম্পর্কে আপনাকে গর্ভাবস্থায় সতর্ক থাকতে হবে:

  • আরামদায়ক জুতো পরুন এবং পড়ে যাওয়া এড়ানোর জন্য সাবধানে পা ফেলুন
  • ড্রাইভিং-এর সময়ন সীট বেল্ট পরুন এবং আপনি বায়ু ব্যাগ থেকে অনেক দূরে বসতে ভুলবেন না
  • আপনার ওবেস্ট্রিসিয়ানের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ এড়িয়ে চলুন
  • মদ এবং ধূমপান এড়ান। নিষ্ক্রিয় ধূমপানও ক্ষতিকারক
  • ক্যাফিন এবং কৃত্রিম রংযুক্ত পণ্য এড়ান
  • প্রচুর জল পান করে ডিহাইড্রেশন এড়িয়ে চলুন
  • ক্লান্তি প্রতিরোধ করতে পা-কে বিশ্রাম দিন। পা এবং গোড়ালির ফুলে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। দিনের মধ্যে, আপনি ঘন ঘন একটি উঁচু জায়গায় আপনার পা রাখা নিশ্চিত করুন
  • পর্যাপ্তভাবে ঘুমান এবং প্রয়োজন হলে, ছোট ছোট ঘুম নিন। আপনাকে স্বাস্থ্যকর রাখতে অন্তত আট ঘন্টার ঘুম প্রয়োজন।

একটি সুস্থ শিশুর জন্য গর্ভাবস্থায় আমি কী করতে পারি?

গর্ভবতী হওয়া উত্তেজনাপূর্ণ বিষয় এবং আপনার মধ্যে ও আপনার জীবনধারায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়। যদিও গর্ভবতী অবস্থায় স্বাস্থ্যকর থাকা আপনার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ, তবুও আপনার সন্তানের সুস্থ হওয়া নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে যা করতে হবে সে বিষয়ে সবসময় আপনার চিন্তা থাকে। নিম্নলিখিত কিছু বিষয় রয়েছে যা আপনাকে সুস্থ শিশু প্রসব করতে সহায়তা করতে পারে:

  • একটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য বজায় রাখুন কারণ খাদ্য আপনাকে শক্তি সরবরাহ করে এবং আপনি যা খান তা আপনার শিশুর শরীরের গড়ে তোলার অংশগুলির মধ্যে একটি। আরো তাজা সবজি, ফল, মাছ, শস্য, ডিম এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য খান।
  • আপনার এবং শিশুর সব প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করা নিশ্চিত করার জন্য প্রসব পূর্ববর্তী মাল্টিভিটামিন সম্পূরক নিন। শিশুর নিউরাল কর্ড, যা মস্তিষ্ক এবং সুষুম্না কান্ডের মধ্যে বিকশিত হয়, এটির জন্য গর্ভাবস্থার প্রথম দিক থেকে ফোলিক এসিড, ক্যালসিয়াম এবং লোহার মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির প্রয়োজন।
  • চাপ-মুক্ত জীবন বজায় রাখুন। কার্যকরী চাপ মোকাবিলার ব্যবস্থাপনা আপনাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একটি সুস্থ ও নিরাপদ গর্ভাবস্থার জন্য 20 টি কৌশল

সুস্থ গর্ভাবস্থার বিষয়ে আপনার কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে, তাই এখন আমরা তাত্ক্ষণিক 20টি কৌশল দেখব যা স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ গর্ভধারনের জন্য কাজে লাগতে পারে।

1. প্রারম্ভিক প্রসব-পূর্ববর্তী যত্নের ব্যবস্থা করা

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

আপনার প্রথম পদক্ষেপটি হবে আপনার গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে একজন ভাল ডাক্তার এবং একটি প্রসব কেন্দ্র খুঁজে বের করা যাতে আপনি প্রসবকালীন যত্ন নিতে পারেন। আপনি একজন যোগ্য, সহজে পাওয়া যায় এমন ডাক্তার চয়ন করুন যিনি পর্যাপ্ত নির্দেশিকা দিতে পারেন। প্রয়োজনীয় আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান এবং পরীক্ষার জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে আপনি তাদের সম্পর্কে সচেতন এবং ভালভাবে প্রস্তুত থাকতে পারেন।

বিভিন্ন গর্ভাবস্থার পরীক্ষা ও স্ক্যান রয়েছে, যা নির্দিষ্ট অবস্থার স্ক্রীনিং করার জন্য ও ভ্রূণের স্বাস্থ্য নির্ধারণ করার জন্য এবং আগে থেকেই অনিয়মগুলি ধরার জন্য ব্যবহার করা হয়।

2. পূর্ণ এবং পুষ্টিকর খাদ্য খান

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

আপনার শরীরের শক্তির প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং গর্ভাবস্থায় মায়ের সঠিক যত্ন নিশ্চিত করার জন্য জরুরি। গোটা শস্য, তাজা সবজি এবং ফল, ডিম, জৈব মাংস এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য খেলে তা আপনার পর্যাপ্ত পুষ্টির গ্রহণ নিশ্চিত করে। এই খাবারে খনিজ, ভিটামিন, অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং অন্যান্য পুষ্টি থাকে। আপনার জীবনের জন্য খাদ্য প্রয়োজন, যদিও, আপনি কি খাচ্ছেন সেটাও নজর রাখা প্রয়োজন। জাঙ্ক খাদ্য এড়িয়ে চলুন।

3. প্রচুর জল পান করুন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনি প্রতিদিন কমপক্ষে 10টি পূর্ণ গ্লাস জল পান করেন কিনা তা নিশ্চিত করুন। কম জল খেলে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সকালের অসুস্থতা, ক্লান্তি, খিঁচুনি ও সংকোচন সৃষ্টি করতে পারে। একটি জলের বোতল সঙ্গে রাখুন এবং কাঁচের, স্টেইনলেস স্টীলের বা বিপিএ-মুক্ত ধারকে করে জল খান যাতে এস্ট্রোজেনের নকলকারী বিষাক্ত পদার্থ আপনার শিশুর কাছে স্থানান্তরিত হয় না।

4. প্রসব পূর্ববর্তী সম্পূরক নিন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

আপনি এবং শিশু স্থায়ীভাবে সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করার জন্য, আপনি প্রসব পূর্ববর্তী সম্পূরক নিতে পারেন। প্রসব পূর্ববর্তী মাল্টিভিটামিনকে সম্পূরক হিসাবে গ্রহণ করা উচিত এবং প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রতিস্থাপক হিসাবে নয়। এই মাল্টিভিটামিনগুলি গ্রহণ করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।  প্রসব পূর্ববর্তী সম্পূরকে ফোলিক এসিড এবং লোহা থাকে। ফোলিক এসিড একটি অত্যাবশ্যক উপাদান যা শিশুর জন্মগত ত্রুটিগুলির ঝুঁকি হ্রাস করে। অতএব, যথাসময়ে এই সম্পূরক গ্রহণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

5. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

আপনার শরীর অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলির মধ্যে একটি হল আপনার আকৃতি এবং ওজন। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে একটি সক্রিয় জীবনধারা বজায় রাখলে আপনাকে স্বাস্থ্যকর এবং নমনীয় থাকতে সাহায্য করবে। ব্যায়াম স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টে সহায়তা করে এবং প্রসব ও মাতৃত্বের চাহিদাগুলি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য একটি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে। আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শের পরে আপনি কোনো ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করতে পারেন। কিছু কার্যক্রম হল হাঁটা, সাঁতার এবং যোগব্যায়াম করা। গর্ভাবস্থার সময়, রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে আপনার হৃৎপিণ্ডে চাপ বৃদ্ধি পায়। একটি 45 মিনিটের ব্যায়ামের সময়সূচী রক্ত সঞ্চালনকে বাড়িয়ে তুলবে এবং আপনার হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী করবে, এবং আপনার শিশু সুস্থ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পাবে।

6. কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

গর্ভাবস্থায় যথেষ্ট ঘুম এবং রিল্যাক্স করার প্রয়োজন। আপনি ভাল ঘুম এবং যতটা সম্ভব আপনার পায়ের বিশ্রাম দেওয়া নিশ্চিত করুন। যোগব্যায়াম এবং গভীর শ্বাস আপনাকে শিথিল করতে এবং শান্ত করতে সাহায্য করতে পারে।

7. অ্যালকোহল, ড্রাগ এবং ধূমপান এড়িয়ে চলুন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন কারণ এটি রক্তের মাধ্যমে আপনার শিশুর কাছে পৌছায়। এটি ফেটাল অ্যালকোহল সিন্ড্রোম (এফএএস) যুক্ত শিশুর জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়, যা শিশুর মানসিক বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। ড্রাগ এবং ধূমপানও শিশুর বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে সমানভাবে বিপজ্জনক।

8. ক্যাফিন কমান এবং ফল দিয়ে রিচার্জ হোন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

ফল দিয়ে নিজেকে রিচার্জ করা ক্যাফিনের চেয়ে বেশি উপকারী। গবেষণা প্রমাণ করে যে ক্যাফিন গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ায়। গর্ভবতী মহিলাদের লোহা কম থাকে, এবং ক্যাফিন আপনার শরীরে লোহার শোষণ করা কঠিন করে তোলে। সুতরাং, ক্যাফিন এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

9. পরিবেশগত বিপদ দূর করুন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

যদি রাসায়নিক পদার্থ, কীটনাশক, বিপজ্জনক উপাদান, তেজস্ক্রিয় উপাদান, সীসা এবং পারদ আপনার কাজের জায়গায় বা বাড়ীতে নিয়মিত থাকে, তবে আপনাকে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং পরামর্শ চাইতে হবে, কারণ এটি আপনার ও আপনার শিশুর জন্য বিপজ্জনক।

10. আপনার ডেন্টিস্টকে দেখান

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

গর্ভাবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তনগুলি দুর্বল মাড়ির দিকে পরিচালিত করে। আপনার দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া এবং মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করতে সতর্কতা অবলম্বন করা যুক্তিযুক্ত। এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরোনের মাত্রা বৃদ্ধি রক্তপাতের এবং মাড়ির নরম হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে। সুতরাং, গর্ভাবস্থায় মৌখিক যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

11. আপনার মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করুন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

গর্ভাবস্থার সময় হরমোন পাল্টে যাওয়ার কারণে, আপনার মেজাজের পরিবর্তন এবং আবেগের কম-বেশী হওয়ার অভিজ্ঞতা হতে পারে। আপনি যদি মনে করেন যে আপনি বিষণ্ণ হয়ে পড়েছেন এবং এটি আপনাকে প্রভাবিত করছে তবে নিশ্চিত করে সহায়তা নিন ও স্বাভাবিকতায় ফিরে আসুন।

12. পেলভিক ফ্লোর পেশীকে শক্তিশালী করা

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

পেলভিক ফ্লোর পেশীকে শক্তিশালী করা প্রসব সহজ হতে সাহায্য করে। এটি আপনার জরায়ু, অন্ত্র এবং মূত্রাশয়কে অবলম্বন দেয়। নির্দেশিকা মেনে প্রসব পূর্ববর্তী ব্যায়াম পেলভিক ফ্লোর পেশীকে জোরদার করতে সাহায্য করে।

 13. আপনার ওজন বৃদ্ধির ট্র্যাক রাখুন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

আপনার ওজনে একটি নির্দিষ্ট ধারায় বৃদ্ধি শিশুর বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে। সুতরাং, আপনি যে সঠিক ভাবে চলছেন তা নিশ্চিত করার জন্য আপনার ওজন ট্র্যাক করা গুরুত্বপূর্ণ।

14. উপযুক্ত পোশাক পরুন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

আরামদায়ক পোশাক পরা নিশ্চিত করুন। আপনার ওজন এবং আকৃতি দ্রুত পরিবর্তিত হবে, আপনার আঁটসাঁট পোশাকের মধ্যে নিজেকে ফিট করলে আপনার এবং শিশুর দমবন্ধ লাগতে পারে।

15. উপযুক্ত জুতো পরুন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

আপনার গর্ভাবস্থার অগ্রগতির সাথে সাথে, আপনার ওজন বৃদ্ধি মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্রকে পরিবর্তন করে এবং আপনার পায়ের উপর একটি বেদনাদায়ক চাপ সৃষ্টি করে। সুতরাং, আপনার পায়ে সহজে যে জুতা ফিট হয় সেরকম জুতো কেনার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।

16. আপনার ত্বকের যত্ন নিন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

গর্ভাবস্থায়, আপনার ত্বক সূর্যালোকের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। আপনার সানবার্ন এবং কালো দাগ হওয়ার প্রবণতা থাকে। এসপিএফ 30 বা তার বেশী মাত্রার সানস্ক্রীন প্রয়োগ করুন।

17. নিজেকে অত্যাধিক প্রশ্রয় দিন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

যদিও আপনি কী খাচ্ছেন তা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন, তবে আপনার শরীরের কথা শুনুন এবং মাঝে মাঝে হঠাত কোন খাবার খেতে ইচ্ছা হলে খান। এছাড়াও, বাইরে গিয়ে দুপুরের আহার করা, ম্যানিকিউর করা, বন্ধুদের সাথে বাইরে একটি দিন কাটানো যা খুব প্রয়োজন, অথবা শান্তভাবে হাঁটার দ্বারা নিজেকে আনন্দ দিন যাতে চাপমুক্ত হওয়া যায়। এই কার্যক্রম আপনাকে এবং শিশুকে উভয়কে সাহায্য করে।

18. স্বশিক্ষিত হোন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে নিজেকে শিক্ষিত করুন এবং কখন আপনাকে চিকিৎসার সাহায্য নিতে হবে সে সম্পর্কে সচেতন হোন। আপনার ডাক্তারকে কল করুন যদি আপনার নিম্নোক্তগুলি থাকে:

  • তীব্র ব্যথা
  • খিঁচ লাগা
  • যোনি থেকে রক্তপাত
  • তরল লিক করা
  • মাথা ঘোরা
  • বুক ধড়ফড় করা
  • জয়েন্টগুলো ফুলে যাওয়া
  • ভ্রূণের আন্দোলনে হ্রাস

19. চাপ ব্যবস্থাপনা

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত জীবনধারার পরিবর্তন এবং হরমোন পরিবর্তন অনেক কিছুর দাবি করে। গর্ভাবস্থায় জীবন একটি চড়াই-উতরাই যাত্রায় থাকে এবং আপনি বিস্মিত হতে পারেন। সুতরাং, চাপ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বাড়িতে এবং কাজের জায়গায় কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেন তা পরিবর্তন করে চাপ পরিচালনা করতে পারেন। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, বন্ধুদের সাথে কথা বলা এবং কারুশিল্পের কর্মকান্ডে জড়িত থাকার ফলে আপনি চাপ মুক্ত হতে পারেন।

20. আপনার শিশুর সাথে কথা বলুন

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য ২০টি টিপস

আপনার গর্ভের মধ্যে আদরে রয়েছে যে, সেই সন্তানের সাথে কথা বলা, একটি স্মরণীয় এবং আত্মাকে-শান্তিদায়ী কার্যকলাপ হতে পারে। এটি আপনাকে ছোটটির সাথে বন্ধন তৈরি করতে এবং যোগাযোগ করতে সাহায্য করে। আপনি কী অনুভব করেন, আপনার পরিবার, আপনি যা খান এবং আপনার ক্রিয়াকলাপগুলি সম্পর্কে আপনি আপনার সন্তানকে বলতে পারেন। আপনি আপনার সন্তানের কাছে গান গাইতে এবং কিছু পড়তে পারেন।

একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার চিহ্ন

আপনার স্বাস্থ্যের উপর দৈনিক ভিত্তিতে নজর রাখলে এবং আপনার স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হলে, আপনার গর্ভাবস্থা সঠিক পথে চলেছে তা নিশ্চিত করতে অনেক সাহায্য করে। আপনার শরীরের কথা শুনুন এবং লক্ষণগুলি ধরুন, যাতে যে প্রয়োজনগুলির ইঙ্গিত পাওয়া যায় সেগুলি পূরণ করতে পারেন। আপনি যদি ক্ষুধার্ত হন, তবে একটি সুস্থ খাবার খান এবং জাঙ্ক খাবার বন্ধ করুন। আপনি যদি তৃষ্ণার্ত হন, তাহলে জল খান বা একটি পুষ্টিকর পানীয় পান করুন যেমন একটি তাজা রস বা নারকেলের জল, এবং ক্যাফিন ও বায়ুযুক্ত পানীয়গুলি এড়ান। আপনি যদি চাপ অনুভব করেন, একটি ভাল বই পড়ে রিল্যাক্স করার জন্য সময় নিন, বা একটি ছোট ঘুম নিন। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যের নির্দেশক এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর নজর রাখুন। এর অন্তর্ভুক্ত হল:

স্বাভাবিক রক্ত শর্করা এবং রক্তচাপের মাত্রা

গর্ভাবস্থার সময়, রক্তচাপের মাত্রা উঁচুর দিকে থাকে এবং রক্ত শর্করার মাত্রা পরিবর্তিত হয়। অতএব, রক্তচাপ এবং রক্ত শর্করার মাত্রা নিরীক্ষণ করা প্রয়োজন। যদি সম্ভব হয়, একটি রেকর্ড বজায় রাখুন যাতে আপনি প্রয়োজনে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করতে পারেন।

জরায়ু এবং প্লাসেন্টার স্বাস্থ্য

গর্ভাবস্থার শেষ পর্যন্ত ভ্রূণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরায়ু এবং প্ল্যাসেন্টার স্বাস্থ্যকর হওয়া উচিত। প্লাসেন্টাটি জরায়ুর দেওয়ালে সংযুক্ত থাকে। একটি আলগা ভাবে সংযুক্ত প্লাসেন্টা গুরুতর পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। আপনার প্লাসেন্টার স্থাপনের বিষয়ে এবং এটির যথাযথ জায়গায় স্থাপনে সহায়তা করবে এমন ব্যায়ামগুলি সম্পর্কে আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন।

ভ্রুণের বিকাশ

শিশুর বৃদ্ধি এবং গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্য ভ্রুণের বৃদ্ধির হারের দ্বারা নির্ধারণ করা হয়। ওজন বৃদ্ধির মতো ফ্যাক্টর ভ্রূণের বৃদ্ধি নির্ধারণ করে। অক্সিজেনের অভাব এমন একটি উপাদান যা ভ্রূণকে প্রভাবিত করে। কখনও কখনও, এটি প্লাসেন্টার কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে। ভ্রূণের নড়াচড়া নিশ্চিত করে যে শিশু পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছে। আপনি গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে পৌঁছালে, ভ্রূণের নড়াচড়া অনুভব করতে শুরু করতে পারেন। এই নড়াচড়া অনুভব করা এবং তাদের একটি গণনা রাখা আপনার গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্য নির্দেশ করে।

ওজন বৃদ্ধি

আপনার ওজনের একটি স্থায়ী বৃদ্ধি ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং অবশেষে, গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে।

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখলে তা গর্ভাবস্থায় আপনার ভালো থাকাকে বাড়িয়ে তোলে। আনন্দে নিজেকে নিমজ্জিত করা এবং আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আপনি এই স্মরণীয় যাত্রায় সহজে ভাসতে পারবেন।

Back to top button