প্রসব পূর্ববর্তী যত্ন

গর্ভাবস্থায় সর্দি-জ্বর হলে করণীয়

গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর একটি। এই সময় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, যাতে ভ্রূণকে শরীর 'বহিরাগত' হিসেবে না চিনে।

গর্ভবতী মায়েরা সহজেই সর্দি-জ্বরের মতো সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এই অবস্থায় সঠিক জ্ঞান ও যত্ন গ্রহণ করলে মা এবং শিশুর জন্য কোনো বড় জটিলতা তৈরি হয় না।

গর্ভাবস্থায় সর্দি-জ্বরের সাধারণ লক্ষণঃ

  • গলা ব্যথা
  • নাক বন্ধ বা পানি পড়া
  • হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার জ্বর
  • মাথাব্যথা বা শরীর ব্যথা
  • ক্লান্তি বা দুর্বলতা

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

  • জ্বর ১০১°F (৩৮.৩°C) এর বেশি হলে
  • তিন দিনের বেশি সময় ধরে জ্বর বা সর্দি থাকলে
  • শ্বাসকষ্ট হলে
  • বুকে চাপ লাগলে বা ব্যথা হলে
  • গর্ভে বাচ্চার নড়াচড়া কমে গেলে

গর্ভাবস্থায় সর্দি-জ্বর হলে করণীয়ঃ

১. পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ
জ্বর ও সর্দি শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে। তাই গরম পানি, স্যুপ, ফলের রস বেশি করে পান করুন। গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করাও উপকারী।

২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিনঃ
শরীরকে বিশ্রাম দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত কাজ করে। অতিরিক্ত কাজ বা চাপ এড়িয়ে চলুন।

৩. পুষ্টিকর খাবার খানঃ
হালকা কিন্তু পুষ্টিকর খাবার যেমন খিচুড়ি, সবজি স্যুপ, ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করুন। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার (কমলা, লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৪. বাষ্প নিনঃ
নাক বন্ধ বা গলা ব্যথা হলে গরম পানির বাষ্প নিন। এতে আরাম পাবেন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ হবে।

৫. নিজে থেকে ওষুধ খাবেন নাঃ
অনেক সর্দি-জ্বরের ওষুধ গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না।

৬. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুনঃ
হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখুন, বারবার হাত ধুয়ে নিন। এতে সংক্রমণ কমবে এবং অন্যদের মধ্যেও ছড়াবে না।

প্রাকৃতিক উপায়ে উপশমের কিছু পরামর্শঃ
গরম পানিতে আদা, তুলসী ও মধু দিয়ে চা বানিয়ে পান করুন
মধু ও লেবুর মিশ্রণ গলা ব্যথা উপশমে সহায়ক
গরম স্যুপ যেমন মুরগির ঝোল, দ্রুত শক্তি ফেরাতে সাহায্য করে

উপসংহারঃ
গর্ভাবস্থায় সর্দি-জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকুন এবং যথাযথ যত্ন নিন। প্রকৃতপক্ষে, সময়মতো বিশ্রাম ও ডাক্তারের পরামর্শ নিলে মা এবং গর্ভস্থ শিশুর উভয়ের জন্যই স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

Back to top button