খাবার থেকে শিশুর ত্বকে অ্যালার্জির লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা
শিশুর ত্বকে বিভিন্ন রকম অ্যালার্জির মধ্যে ‘অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস’ একটি এবং এটিই একমাত্র সমস্যা যার সঙ্গে খাবারদাবারের সম্পর্ক বিদ্যমান। ত্বকের সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে এসব শিশুর শরীরের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যারও প্রবণতা থাকে—যেমন : নাক থেকে পানি পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, হালকা কাশি এগুলোই বেশি দেখা যায়।
খাবার থেকে শিশুর ত্বকে অ্যালার্জির লক্ষণঃ
প্রথমে মুখমণ্ডলেই এই ত্বকব্যাধির লক্ষণ প্রকাশিত হয়। মুখে বিশেষ করে গালের ওপরের ত্বক বেশ লালচে হয়ে যায় এবং ত্বক অত্যন্ত শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চামড়া একটু ফাটা ফাটা হয় এবং হালকাভাবে চামড়ার ওপরের স্তর উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয় বলে খোসা ওঠা ভাব তৈরি হয়। এ রকম মাথার ত্বকেও হয়ে থাকে অনেক ক্ষেত্রে, যেটাকে অনেকে খুসকি বলে ভুল করেন। কখনো কখনো এটা সারা শরীরেই ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সে ক্ষেত্রে শিশুর যন্ত্রণা থাকে প্রায় অসহনীয়।
কোন বয়স থেকে হয়?
সাধারণত, ছয় মাস বয়সের পরই এটা দেখা দেয়, কেননা শিশুর মায়েরা এই সময় ধীরে ধীরে বুকের দুধের সঙ্গে সঙ্গে অন্য খাবার দেওয়া শুরু করেন এবং সমস্যাটি মূলত খাবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিসের এসব শিশুকে সাধারণত ‘অ্যাটপিক বেবি’ বলা হয়। এরা জন্মগতভাবেই খুব সংবেদনশীল হয়ে থাকে।
শিশুর ত্বকে অ্যালার্জির খাবারের সঙ্গে সম্পর্কঃ
গবেষণায় দেখা গেছে ডিম, গম বা গমের তৈরি যেকোনো খাবার, যেকোনো ধরনের সাইট্রাস ফল (যেমন কমলা, লেবু, মাল্টা), বাদাম, কিছু ক্ষেত্রে গরুর দুধ (ইনফ্যান্ট ফর্মুলা দুধ নয়), সয়া প্রোটিন জাতীয় খাবার এ ধরনের সমস্যা তৈরিতে ভূমিকা পালন করে থাকে। অনেক সময়ই শিশুর মা ত্বকের এই সমস্যার সঙ্গে যে খাবারদাবারের সম্পর্ক আছে তা বুঝতে পারেন না অ্যালার্জিক খাবারগুলো খাওয়ার অতি অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক সময় ঠোঁট, জিভ ফুলে যায়, নাক-চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে, অনেক সময় বমি, জ্বর ও পাতলা পায়খানাও হতে দেখা যায়। যদি এসব খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই ত্বকে ছোট-বড় লাল চাকার মতো উঠে যায়, তাহলেও খাবারের সঙ্গে এই রোগের সম্পৃক্ততা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
খাবার থেকে শিশুর ত্বকে অ্যালার্জির চিকিৎসাঃ
অ্যালার্জিক খাবারগুলো বাদ দেওয়া হলেও অ্যাটপিক শিশুদের ত্বকেরও সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। শিশুর ত্বকে যা কিছুই লাগানো হোক তা হালকা ও আলতোভাবে মালিশ করতে হবে। শিশুর ত্বক কখনোই শুষ্ক ও রুক্ষ হতে দেওয়া যাবে না।
প্রথমাবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যে খাবারগুলো থেকে এই অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস রোগটির উদ্ভব ঘটে বা বেড়ে যায়, দুবছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে এগুলো না দেয়াই ভালো। দুবছর পার হয়ে গেলে এই খাবারগুলো শিশুকে এই রোগে আক্রান্ত করতে পারে না।