শিশুর ওজন বাড়ছে না? করনীয় কি?
অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানের ওজন নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকেন। ওজন বেশি বেড়ে যাওয়া যেমন দুশ্চিন্তার, তেমনি বয়স অনুসারে ওজন না বাড়াটাও দুশ্চিন্তার। ওজন না বাড়ার সমস্যাটি কখনও কখনও ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এ সমস্যার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
পুষ্টির অভাব
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য সঠিক পুষ্টি অত্যন্ত জরুরি। যদি শিশুর খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ, আমিষ ও শর্করার অভাব থাকে, তবে ওজন কমে যেতে পারে বা ওজন বৃদ্ধির গতি মন্থর হতে পারে। যেমন– ভিটামিন এ, ডি এবং ক্যালসিয়ামের অভাব শিশুদের হাড়ের সঠিক গঠনকে বাধাগ্রস্ত করে, যা তাদের শারীরিক বৃদ্ধি প্রভাবিত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে ভুগছে। সুতরাং সন্তানকে পুষ্টিকর এবং পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ানোর বিষয়ে মা-বাবাকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
জটিল রোগ বা শারীরিক অসুস্থতা
শিশুর শরীরে যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগ থাকে যেমন– কিডনি রোগ, থাইরয়েড সমস্যা, বা জ্বর, তবে তার ওজন বাড়া বন্ধ হতে পারে। থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমে গেলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ধীর হয়। সিস্টিক ফাইব্রোসিস বা সিলিয়াক রোগ যেমন শোষণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, তেমনই পুষ্টির অভাবজনিত সমস্যার সৃষ্টি করে, যা শিশুর ওজন না বাড়ার একটি বড় কারণ।
সংক্রমণ বা পরিবেশগত কারণ
শিশুদের সংক্রমণ, বিশেষত ডায়রিয়া ও শ্বাসনালি সংক্রমণ, ওজন কমার সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে একটি। দারিদ্র্যপীড়িত ও দুর্গম এলাকায় শিশুদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের অভাব তাদের বারবার অসুস্থ করে তোলে এবং এতে তারা প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। এসব রোগে আক্রান্ত শিশুর শরীরের পুষ্টি গ্রহণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যা তাদের ওজন না বাড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে।
মাতৃদুগ্ধের অভাব
মাতৃদুগ্ধ শিশুর জন্য প্রাথমিক এবং সর্বোত্তম পুষ্টির উৎস। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, শিশুদের ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো প্রয়োজন, যা তাদের পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করে। যদি মা পর্যাপ্ত দুধ দিতে না পারেন বা শিশুকে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত করা হয়, তবে ওজন বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, কর্মজীবী নারীরা দিনের অনেকটা সময় অফিসে ব্যস্ত থাকার কারণে সময়মতো কোলের শিশুকে দুধ পান করাতে পারছেন না। এমন অবস্থায় তারা ব্রেস্ট পাম্প এর মাধ্যমে বুকের দুধ সংগ্রহ করে রেখে যেতে পারেন। যা পরবর্তী সময়ে পরিবারের অন্য কেউ শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
জিনগত ইস্যু
কিছু শিশুর ওজন না বাড়ার পেছনে জিনগত কারণও থাকতে পারে। যেমন– ডাউন সিনড্রোম বা প্রাডার-উইলি সিনড্রোমের মতো অবস্থায় শিশুদের ওজন বৃদ্ধি সাধারণ থেকে কম হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার পাশাপাশি শিশুর খাদ্য ও পুষ্টির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
তাহলে কী করবেন?
শিশুর শারীরিক, মানসিক সমৃদ্ধির জন্য শিশুর পুষ্টির দিকে নজর রাখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।
নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার উৎস নির্ণয় করতে হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশুর জন্য একটি সুস্থ, সুন্দর মানসিক ও সামাজিক পরিবেশ প্রদান করতে হবে। শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। সর্বোপরি, শিশুর ওজন না বাড়ার কারণ সঠিকভাবে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।