সন্তান সম্ভবা মা, কিভাবে নিতে হবে নিয়মিত যত্ন?
মা পৃথিবীর মধুরতম ডাক। মায়েরা আমাদের পৃথিবীর আলো দেখাতে সীমাহীন কষ্ট সহ্য করেন। গর্ভাবস্থায় তাই মায়ের দরকার বাড়তি পুষ্টি, বাড়তি যত্ন।

আমরা কি প্রত্যেকে আসলেই জানি সঠিকভাবে কেমন করে যত্ন নিতে হবে! মায়ের যত্ন কখনই তার নিজের একার পক্ষে করা সম্ভব না কারণ গর্ভধারণের পর অনেক মায়ের অবস্থাই নাজুক হয়ে যায়। আপনার কাছের মানুষটিকে মানসিক, নৈতিক সহায়তা করতে জেনে নিন কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য।
৪ টি আবশ্যক পরীক্ষাঃ
(১) ১৬ সপ্তাহের মধ্যে – রক্তশূন্যতা, সিফিলিস, প্রসব জনিত কোন জটিলতা আছে কিনা। জন্ম পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য শিক্ষাও নিতে হবে।
(২) ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে – বাচ্চা ঠিক মতো বাড়ছে কিনা, পেটের বেড়ে যাওয়া অংশ মেপে পরীক্ষা করাতে হবে।
(৩) ৩২ তম সপ্তাহে – এক্লামশিয়া (উচ্চ রক্ত চাপ, প্রস্রাবে প্রোটিন যাওয়া, হাত পা ফুলে যাওয়া আছে কিনা), জন্ম পরিকল্পনাকে আরও উন্নত করা।
(৪) ৩৬ তম সপ্তাহে – বাচ্চার পজিশন, জরায়ুতে কীভাবে আছে, মাথা নাকি পা বা শরীরের অন্য অংশ নীচের দিকে তা জানতে হবে। জন্ম পরিকল্পনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

গর্ভাবস্থার বিপদচিহ্ন সমূহ –
এই বিপদচিহ্ন গুলোর একটিও দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
(১) তীব্র মাথা ব্যাথা
(২) অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
(৩) যোনিপথে রক্তপাত হওয়া
(৪) তলপেটে ব্যথা
(৫) চোখে ঝাপসা দেখা
(৬) হাত পা ফুলে যাওয়া
(৭) বাচ্চার নড়া চড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া
সন্তান-সম্ভবা মায়ের খাদ্যাভাসঃ
গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য। কারণ পূর্বে আপনি যাই খেতেন তা শুধু আপনার উপর প্রভাব ফেলত। আর এখন এটা আপনার বাচ্চার সুস্থতার সাথে জড়িত।
(১) প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে। সবুজ শাক-সবজি, মাছ-মাংস খেতে হবে। অবশ্যই নিয়মিত খেতে হবে, পাশাপাশি ভাত, ডাল, শস্য দানা, আলুও খেতে হবে।
(২) আয়রন ও ফলিক এসিড এর চাহিদা বেড়ে যায়। আয়রন প্লাসেন্টা তৈরি হওয়ার জন্যে রক্ত যোগায়। ব্রকলি, কচু শাক, পালং শাক তাই গর্ভাবস্থায় জরুরী। ঘাটতি থাকে নিয়মিত ট্যাবলেট খেতে হবে। ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে রক্ত দিতে হতে পারে।

যা যা করা যাবে না ও সাধারণ কিছু উপদেশঃ
(১) সন্তান সম্ভবা মা এর ভারি কাজ করা যাবে না ( সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা কম করতে হবে, ভারি জিনিস ওঠানো যাবে না, ঝাঁকুনি দেয়া যানবাহন বা রাস্তায় চলা যাবে না।
(২) সন্তান সম্ভবা মা ধূমপান, মদ পান বন্ধ করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে ও বিশ্রাম নিতে হবে।
(৩) অনেক ওষুধ আছে যা খেলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে বা বিকলাঙ্গ হতে পারে। প্রায়ই ব্যবহার করা হয় এমন কিছু ওষুধের নাম হচ্ছে – celecoxib, ibuprofen, all oral contraceptives, testosterone, griseofulvin, sulfisoxazole, povidone iodine, metronidazole, methotrexate এরকম আরও কিছু ওষুধ। এ সময় যেকোন ওষুধ খাওয়ার আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চার মঙ্গলের জন্যে মা সবই করতে পারেন। একটু সচেতন থাকলেই এড়ানো যাবে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক পরিস্থিতি। সন্তান সম্ভবা মা নিয়মগুলো যত্নের সাথে পালন করুন। সুস্থ, সুন্দর বাচ্চার হাসি মুখ দেখার শুভকামনা রইল।