স্তনপান

মায়ের বুকের দুধ কম হওয়ার কারণ ও বৃদ্ধির উপায়

মায়ের বুকের দুধ যে নবজাতকের জন্য সবচেয়ে সেরা খাবার সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। এবং প্রত্যেক মায়ের সবচেয়ে বড় ইচ্ছা থাকে বাচ্চা যেন ভালো থাকে, ভালো ভাবে দুধ খায় এটাই।

বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই সাধারণ এবং সহজ একটি বিষয়। তবুও কোন কোন সময় এই সাধারণ কাজটিও সঠিকভাবে করা সম্ভব হয়ে উঠে না। বিশেষ করে যারা প্রথমবার মা হয়েছেন এবং সহযোগিতা করার মত পরিবেশ পান নাই তাড়া বুকের দুধ খাওয়াতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। ফলে, বুকের দুধের পরিমাণ (প্রবাহ) কমে যায়। বাচ্চা পরিমানমত দুধ পায় না। কেন মায়ের বুকের দুধের প্রবাহ কমে যায় এবং কিভাবে প্রবাহ ধরে রাখা যায় বা বৃদ্ধি করা যায় সেটা নিয়েই আলোচনা করবো।

কি কি কারণে মায়ের বুকের দুধ কমে যায়?

  • দেরিতে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা।
  • বুকের দুধের আগেই শিশুকে অন্যকিছু খাওয়ানো। এতে বাচ্চার ক্ষুধা কমে যেতে পারে এবং বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে সমস্যা হতে পারে।
  • মায়ের মধ্যে সন্দেহ, দ্বিধাধন্দ থাকা। বিশেষ করে নতুন মায়েদের অনেক সময়ই মনে হয় যে সে বাচ্চাকে সঠিকভাবে দুধ খাওয়াতে পারবে না। ফলে, প্রোল্যাকটিন ও অক্সিটোসিন হরমোন সঠিকভাবে বা পরিমাণমত তৈরি নাও হতে পারে। এবং পর্যাপ্ত দুধ তৈরি ও নিঃসরণ নাও হতে পারে।
  • শারীরিক ব্যথা বেদনা বা মানসিক অস্থিরতা থাকলে মায়ের রক্তে অক্সিটোসিন নিঃসরণ কমে যায়। এ কারণে পর্যাপ্ত ব্যথানাশক সেবন করা ও মাকে মানসিক সমর্থণ দেয়া জরুরি।
কিভাবে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করা যায়
কিভাবে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করা যায়

কিভাবে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করা যায়?

  • যতদ্রুত সম্ভব নবজাতককে বুকের দুধ দেয়া শুরু করা। কমপক্ষে ১ ঘন্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে।
  • নবজাতক ও তার মাকে একই রুমে(rooming in) এবং সম্ভব হলে একই বিছানায় (bedding in) রাখতে হবে। এর ফলে মা নবজাতকের স্পর্শ পাবে, গন্ধ পাবে, শব্দ শুনতে পাবে এবং দুধ বেশি বেশি তৈরি হবে। এবং বেশি বেশি নিঃসরণও হবে।
  • রাতে প্রোল্যাকটিন নিঃসরণ বেশি হয়। এ কারণে শিশুকে রাতের বেলায় ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। দিনেরাতে যখনই বাচ্চাকে চাহিদা মোতাবেক খাওয়াতে হবে।
  • শিশুকে একপাশের স্তন থেকে একবারে সম্পুর্ণ খাওয়াতে হবে। ফলে, স্তন (অর্থাৎ দুধকোষ বা alveoli) খালি হবে। দুধকোষ খালি হলে প্রোল্যাকটিন নিঃসরণ বাড়ে এবং বেশি বেশি দুধ তৈরি হয়।
  • মায়ের পুষ্টি ঠিক থাকতে হবে। যদি মা অপুষ্টির শিকার হন তাহলে অনেক ক্ষেত্রে দুধের পরিমাণ কমে যেতে পারে। একারণে প্রয়োজন ক্ষেত্রে মাকে চিকিৎসা করাতে হবে। একই সাথে মাকে পুষ্টিকর খাবার (শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, মিনারেলইত্যাদি সমৃদ্ধ) খেতে হবে। সাধারণভাবে বলা যায় গড়পড়তা মানুষের ৩ বেলার বিপরীতে দুগ্ধদায়ী মাকে ৪-৫ বেলা খেতে হবে ( প্রতিদিন ৫০০ ক্যালরি অতিরিক্ত খেতে হবে)।
  • দুধদানকারী মাকে ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম খেতে হবে। প্রসবের ৪২ দিন পর ভিটামিন এ (২০০,০০০ ইউনিট) এবং ০৩ মাস পর থেকে আয়রণ ট্যাবলেট খেতে হবে।
  • দুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কিছু খাবার (যেমন- লাউ, কালিজিরা ইত্যাদি) উপকার করতে পারে। একই সাথে কিছু ঔষধও সহায়তা করতে পারে।
Back to top button