জটিলতা

জন্মের সময় শিশুর কম ওজন হওয়ার কারণ কী কী?

জন্মের পর নবজাতকের স্বাভাবিক ওজন খুব গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের সময় নবজাতকের ওজন যদি আড়াই কেজির কম হয়, তাহলে তা ভাববার বিষয়। আর ওজন যদি দেড় কেজিরও কম হয়, তাহলে তাকে খুব কম ওজনের শিশু বা ভেরি লো বার্থ ওয়েট বেবি বলা হয়। আবার ৭৫০ গ্রামের কম হলে সেই শিশুকে ওজনহীন শিশু বলা হয় চিকিৎসার ভাষায়।

শিশুদের কম ওজন নিয়ে জন্মানোর কিছু সাধারণ কারণ এখানে দেওয়া হল:

১. একাধিক বাচ্চা
মা যদি একাধিক শিশু গর্ভধারণ করেন, শিশুদের জন্মের সময় ওজন কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর কারণ পুষ্টির পরিমাণ ভাগ হয়ে যায়, গর্ভাশয় প্রসারিত হয় এবং শিশুরা মায়ের গর্ভের উপর অতিরিক্ত চাপ দেয়।

২. নির্ধারিত সময়ের পূর্বে জন্ম
গর্ভধারণের ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে শিশুর জন্ম হলে তাকে অপরিণত বা অকালে জন্ম হিসাবে গণ্য করা হয়। নির্ধারিত সময়ের পূর্বে জন্মানো বা অপরিণত শিশুর সাধারণত খুব কম ওজন হয়।

৩. প্লাসেন্টা সংক্রান্ত সমস্যা
গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা সম্পর্কিত সমস্যা যেমন প্লাসেন্টা প্রিভিয়া অথবা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ফলে ভ্রুণে পুষ্টি এবং রক্তের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

মায়ের যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে
মায়ের যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে

৪. মায়ের যদি হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ গর্ভাবস্থায় জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে যা ভ্রূণের পক্ষে মারাত্মক হতে পারে। এটি ভ্রূণেরর রক্ত প্রবাহ এবং অত্যাবশ্যক পুষ্টির শোষণকে প্রভাবিত করতে পারে, শিশুকে কম ওজন নিয়ে জন্মদানের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

৫. জরায়ুর অস্বাভাবিকতা
কখনও কখনও গর্ভাবস্থায় জরায়ুর কিছু অস্বাভাবিকতা আপনার শিশুর সীমিত বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। জরায়ুর কার্যক্ষমতা সংক্রান্ত ত্রুটি, ফাইব্রয়েড বা এই ধরনের অন্যান্য অবস্থা শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে জন্মের সময় তার কম ওজনের কারণ হতে পারে।

৬. মায়ের মাদক গ্রহণ
মা যদি গর্ভধারণের সময় ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে এমন ওষুধ, অ্যালকোহল ব্যবহার করেন বা গর্ভাবস্থায় ধূমপান করেন, তবে তা ভ্রূণে অক্সিজেনের স্বাভাবিক সরবরাহকে বিপর্যস্ত করতে পারে। এবং এর ফলে শিশুর জন্মের সময় ওজন কম হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল গ্রহন বা ধূমপান করা
গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল গ্রহন বা ধূমপান করা

৭. ‘আই ইউ জি আর‘ বা জরায়ুর মধ্যে স্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ
কখনও কখনও ‘আই ইউ জি আর‘-এর কারণে ভ্রূণের বৃদ্ধি বিলম্বিত হয় যার ফলে একটি শিশুর জন্মের সময় ওজন কম হতে পারে কম জন্ম ওজন যদি জেনেটিক কারনে হয়ে থাকে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশু স্বাস্থ্যবান হতে পারে। সাধারণত দুই ধরনের ‘আই ইউ জি আর‘ রয়েছে – অপ্রতিসম এবং প্রতিসম ‘আই ইউ জি আর‘। প্ল্যাসেন্টার সমস্যা, মায়ের অপুষ্টি, অন্যান্য সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি, হল ‘আই ইউ জি আর‘ হওয়ার কারণ।

৮. সংক্রমণ
গর্ভাবস্থায় মায়ের বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ হওয়া একটি প্রচলিত ঘটনা এবং এই সংক্রমণ রোধে ব্যবহৃত ওষুধগুলির প্রতিক্রিয়া প্রভাবিত করতে পারে। ভ্রূণের বৃদ্ধিকে, যে কারণে জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হতে পারে।

৯. ডায়াবেটিস
মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে, স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বড় আকারের শিশুর জন্মদানের সম্ভাবনা বেশি। তবে, কিছু ক্ষেত্রে শিশুর জন্মের সময় ওজন কমও হতে পারে।

মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে
মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে

১০. জরায়ুনালীর ত্রুটি বা সার্ভিকাল অস্বাভাবিকতা
কোনো মায়ের তার সার্ভিক্সে সমস্যা থাকলে, এটি নির্ধারিত সময়ের পূর্বে প্রসবের কারণ হতে পারে এবং এইভাবে জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হতে পারে। আপনার ডাক্তার আপনার সার্ভিক্স–এ একটি সেলাই করে দেওয়া বা সিরক্লাজ করার সুপারিশ করতে পারেন।

১১. পূর্বে কম ওজনের শিশু জন্মদানের ইতিহাস
যদি আপনার আগে কম ওজনের শিশু জন্মদান বা অকাল জন্মদানের ইতিহাস থাকে তবে আপনার পরবর্তী গর্ভাবস্থায়ও একই সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

১২. মায়ের পুষ্টির অভাব
গর্ভাবস্থায় মা যদি সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ না করেন তবে এটি গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এর ফলে কম ওজনের শিশুর জন্মও হতে পারে।

Back to top button