শিশুদের মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় তাদের মধ্যে ত্বকের সমস্যা দেখা যাওয়া সাধারণ একটি ঘটনা, এর কারণ হল তাদের ত্বক তখনও সংবেদনশীল হয় এবং তাদের চারপাশের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে থাকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই, শিশুর ত্বকের কোন জায়গায় আক্রান্ত হয় তার উপর নির্ভর করে তার বিরক্তি এবং অস্বস্তি কতটুক হবে। খুশকি হল এমনই একটি ত্বকজনিত সমস্যা যা আপনার বাচ্চার মাথার ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে। বর্তমান সময়ে এটি অত্যন্ত সাধারণ সংক্রমণ যা অনেক শিশুদের হয়ে থাকে।
খুশকি কি?
খুশকি হল ত্বকের একটি সমস্যা যা সেবোরিহা ডার্মাটাইটিস নামে পরিচিত। এটি মাথার ত্বকে এবং মাঝে মধ্যে ভ্রু ও চোখের পাতার লোমের গোড়ায়ও হয়ে থাকে। এতে ত্বকে আঁশ ওঠে এবং তারপর ছোট ছোট সাদা আস্তরণ হিসেবে আঁইশাকার স্তর দেখা যায়। এটির কারণে ত্বকে লালচে ভাব এবং চুলকুনি হতে পারে। যদি খুশকির চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা হয়, এটি চুল ঝরে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে। যদি আপনার বাচ্চার অত্যধিক পরিমাণে অস্বাভাবিক ভাবে চুল ঝরে যেতে থাকে তবে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন, কারণ অন্যান্য কিছু সমস্যার ক্ষেত্রেও এই একই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কিছু ব্যবহার করলে অনেক সময় অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
শিশুদের খুশকি হওয়ার কারণসমূহঃ
আপনার বাচ্চার মাথায় খুশকি হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে। যেমনঃ
- ফাঙ্গাসের বৃদ্ধিঃ ফাঙ্গাস ম্যালাসেসিয়ার কারণে মাথার ত্বকের উপর মৃত ত্বকের কোষগুলি অত্যধিক পরিমাণে স্খলিত হতে পারে। যখন এই কোষগুলি তৈল গ্রন্থিগুলি দ্বারা উৎপাদিত সেবামের সাথে মিশে যায়, তখন এটি খুশকি উৎপাদনের কারণ হয়ে ওঠে।
- অতিরিক্ত শ্যাম্পু করাঃ খুব বেশী শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকের সমস্ত প্রাকৃতিক তেলগুলি উধাও হয়ে যেতে পারে। এই কারণে ত্বক শুকনো হয়ে যায় যার পরিণামস্বরূপ খুসকিতে রূপান্তরিত হয়। ত্বকের উপর রাসায়নিকের প্রভাবের কারণে কখনও কখনও আবার ডার্মাটাইটিস বা চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।
- পর্যাপ্ত শ্যাম্পু না করাঃ মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মৃত ত্বক,ময়লা এবং তেলকে খুব দ্রুত একত্রিত করে যা খুশকি সৃষ্টি করে।
- ত্বকের অবস্থাঃ বেশ কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ত্বকের অবস্থার কারণেও খুশকি হয়ে থাকে। একজিমা এবং সোরিয়াসিস এগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।
- তাপঃ যদি মাথার ত্বক অতিরিক্ত তাপের সংস্পর্শে আসে, সরাসরি সূর্যালোকের দাঁড়ালে খুশকিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- আর্দ্রতাঃ আর্দ্রতার অভাবের কারণে বিশেষত শীতকালে মাথার ত্বক শুকিয়ে গিয়ে খুশকির প্রকোপ বেড়ে যায়।
- তৈলাক্ত মাথার ত্বকঃ ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং সেটিকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সকলের মাথার ত্বকই তেল উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু এই তেল উৎপাদনের পরিমাণ যদি অতিরিক্ত হয়ে থাকে, তবে সেটি খুশকির কারণ হয়ে ওঠে।
খুশকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায়সমূহ
শিশুদের খুশকির কিছু ঘরোয়া প্রতিকার যেগুলি আপনি ব্যবহারের চেষ্টা করতে পারেন, সেগুলি হলঃ
- চুল আঁচড়ানোর চিরুনি বা ব্রাশ এবং শ্যাম্পুঃ একটি নরম ব্রিস্টল বা পশুর হাড় দিয়ে তৈরী ব্রাশ বা বাচ্চাদের নরম চিরুনি ব্যবহার করে আপনার সন্তানের মাথা ধীরে ধীরে ব্রাশ করুন বা আঁচড়ে ঝেরে দিন। এটি তার মাথা থেকে মৃত আঁইশাকার স্তরকে অপসারিত করবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে বাচ্চার চুল ধুয়ে দিন।
- ওষুধযুক্ত শ্যাম্পুঃ যদি আপনার সন্তানের মাথায় খুশকি ক্রমশ বাড়তে থাকে তবে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করুন এবং ডাক্তারের নির্ধারিত পরামর্শের পাশাপাশি শ্যাম্পুর বোতলের উপরে উল্লিখিত নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।
- কন্ডিশনার ব্যবহার নয়ঃ কোনও অবস্থাতেই আপনার বাচ্চার চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার উচিত নয়। আসলে এটি তার চুল এবং মাথার ত্বকের প্রকৃতিকে গুরুতরভাবে পরিবর্তন অথবা ক্ষতিগ্রস্থ করে তুলতে পারে।
- ধুয়ে পরিষ্কার রাখাঃ শ্যাম্পু করার পর মাথা ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করুন এবং একটি নরম তোয়ালে দিয়ে মাথার চুলগুলি মুছে ফেলুন।
- প্রশমিত করুনঃ কখনও কখনও ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকে আঁচড় লেগে অবস্থা আরো গুরুতর হতে পারে। সেই জায়গায় নারকেল তেল বা অ্যালোভেরা ব্যবহার করে ত্বকের প্রদাহ এবং অস্বস্তি লাঘব করা যেতে পারে।