শিশুকে ৬ মাস বয়স থেকে কি কি খাওয়াবেন?
আপনার সন্তানের বয়স ৬ মাস হতে চলেছে? এখনই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন যে বাড়তি খাবারের তালিকায় কী কী যোগ করবেন? সাধারণত চিকিৎসকদের পরামর্শ, শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি পুষ্টিকর খাবার দিতে হয়।
জন্মের পর থেকে শিশুর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধই খাওয়াতে হবে। এই সময়টিকে বলা হয় ‘ব্রেস্ট ফিডিং পিরিয়ড। ৬ মাসের পর থেকে শুরু হয় হবে ‘উইনিং পিরিয়ড’। অর্থাৎ, এই সময়টিতে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবারও দিতে হবে শিশুকে। যে খাবার দিয়ে উইনিং পিরিয়ড শুরু করা হয় সেগুলোকে বলা হয় উইনিং ফুড। বছর দুয়েক পর্যন্ত চলবে এই ‘উইনিং পিরিয়ড’। উইনিং পিরিয়ড ঘরের খাবার দিয়ে শুরু করা উচিত।
শিশুর জন্য প্রথম সলিড ফুড হিসেবে আদর্শ কিছু খাবারের নাম নিচে দেয়া হলোঃ
- ফলের রস (টক জাতীয় ফল বাদে)
- গাজর সিদ্ধ
- মিষ্টি আলুর পিউরি
- চটকানো পাকা কলা
- ডালের পানি দিয়ে চটকানো নরম ভাত
- আপেল পিউরি
- গাজর সিদ্ধ
- জাউ ভাত, সবজি সেদ্ধ
- আস্তে আস্তে চাল, ডাল ও ২ ধরনের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি
বাচ্চাদের সঠিক ভাবে বেড়ে উঠার জন্য খাদ্য তালিকায় প্রধান ৭ রকমের খাবারঃ
- ডিম
- মাছ, মাংস
- রঙিন শাক সবজি
- বাদাম, ডাল জাতীয় খাবার
- দুগ্ধজাত খাবার
- ভাত, রুটি
- অন্যান্য শাক সবজি ও ফলমূল
কীভাবে শিশুর প্রথম সলিড খাবার শুরু করবেন?
১) প্রথম দিন– ১ চামচ, দুপুর বেলা। দ্বিতীয় দিন– ২ চামচ, সকালে ও দুপুরে। তৃতীয় দিন– ৩ চামচ, সকালে, দুপুরে ও রাতে।
২) যখন থেকে শিশু রান্না করা খাবার খাওয়া শুরু করবে, তখন থেকে শিশুর খাবারে ২ থেকে ৩ চামচ তেল দিয়ে রান্না করা উত্তম।
৩) প্রতিদিন ১ থেকে ২ বার পুষ্টিকর নাস্তা খাওয়াতে হবে এবং ১ পোয়া বাটির হাফ বাটি করে দিনে দু’বার ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার দিতে হবে ।
৪) শিশু সারাদিন ৩ ঘন্টা পর পর খাবে, যার মধ্যে একটি পুষ্টিকর নাস্তা এবং দু’টি বাড়তি খাবার দিতে হবে। যেমন- ফলের রস, ডাবের পানি, কলা, দুধ ইত্যাদি। সকালের খাবার শুরু হবে বুকের দুধ দিয়ে। শিশুকে ২ বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে।
শিশুরা শক্ত খাবারে অভ্যস্ত হওয়ার পর খাবার তালিকা কেমন হবে?
১) সকাল ৮টা- নাস্তা হিসেবে নরম খিচুড়ি। (খিচুড়িতে ১ মুঠ চাল, চালের অর্ধেক পরিমাণে ডাল, দুই রকমের সবজি, ২ থেকে ৩ চামচ তেল, কাঁটা ছাড়া মাছ, চিকেন অথবা কলিজা দেয়া যেতে পারে। (একদিনে দুই ধরনের বেশি সবজি দিবেন না)
২) সকাল ১১টা- বুকের দুধ / ফর্মুলা মিল্ক / সিজনাল ফল / দুধ দিয়ে রান্না করা পায়েস
৩) বেলা ২টা- নরম খিচুড়ি / ডাল দিয়ে নরম ভাত সাথে মাছ বা মাংস এক পিস
৪) বেলা ৫টা- যেকোনো ফল যেমন- পাকা কলা/পাকা পেঁপে/আম অথবা সেদ্ধ ডিমের কুসুম/নরম বিস্কুট/নুডলস(ইন্সটেন্ট না)
৫) রাত ৮টা- দুপুরের মতো ভাত, মাছ, সবজি
৬) ঘুমানোর আগে- বুকের দুধ
মনে রাখবেনঃ
- বাচ্চাকে ৬ মাস বয়সের পর থেকে পানিও পান করতে দিতে হবে।
- স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ঘরে তৈরি খাবার দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
- এই ধরনের খাবারগুলি শিশুর কাছে নতুন, তাই সব খাবার ঠিক ভাবে হজম নাও হতে পারে। এজন্য সব নতুন খাবার একদিনে দেওয়া উচিত না। নতুন খাবার পর্যায়ক্রমে একটা একটা করে শুরু করুন। বাচ্চা যদি কোন খাবার হজম না করতে পারে বা স্যুট না করে বা অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেই খাবার খাওয়ানো বন্ধ রাখুন।
- বাচ্চাকে নতুন খাবার দেওয়ার পর তার পায়খানা খেয়াল করুন, আমাশয় বা হজমে সমস্যা হলে সেটি কিছুদিন বন্ধ রাখুন।
- বাচ্চাকে ব্লেন্ড কোন খাবার দিবেন না।
- সুজি, সাগু, চালের গুঁড়া না দেয়াই উত্তম।
- আর যদি বাচ্চাকে শিশুখাদ্য দিতেই হয়, তাহলে প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ও উন্নতমানের শিশুখাদ্য দিতে পারেন।